বিএম আমীর জিহাদী 09 April, 2024 10:17 PM
মহিমান্বিত রমাযানে সংযম আর ত্যাগের উপঢৌকন ঈদ উৎসব। পবিত্র ঈদে আনন্দের খুশি সংযম ও ত্যাগী মুসলিম সাধকের একান্ত প্রাপ্য ৷ মুহাম্মদ স. ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক জাতিরই জাতীয় উৎসব দিবস রয়েছে ৷ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হলো মুসলমানদের বাৎসরিক আনন্দপ্রহর দিন ৷ এ ঈদ বছর ঘুরে দ্বারে দ্বারে আসে, বারে বারে ৷ বয়ে আনে মুসলিম সমাজে খুশির সওগাত।
ঈদের আচার-অনুষ্ঠান কিংবা ঈদের আনন্দভোগ বলতে তাই বোঝায় যা ইসলাম সমর্থিত, শরিয়াহ প্রথা বা অবিকৃত মুসলিম ঐতিহ্য অনুযায়ী পালিত হয়ে আসছে দেড় হাজার বছর যাবৎ ৷ সুতরাং ঐ বিনোদন, যার অর্থ হলো পর-পুরুষ, নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, গানবাদ্য, স্বেচ্ছাচারিতা তা ইসলামে অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
মূলত ঈদ মানে ত্যাগের আনন্দ, ভোগের আনন্দ নয় ৷ এ ঈদ হচ্ছে মুসলমানদের বিশেষ সংস্কৃতি, যা বিধর্মী বা বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত । আমরা অনেকেই মনে করি উৎসব মানে গান বাদ্য, নাচ-গান করা, ঢোল -তবলা -বেহালা -হারমনিয়াম বাজানো ইত্যাদি। অনেকে এগুলোকেই মূল সংস্কৃতি মনে করে ৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে আর সেখানে মিউজিকসমৃদ্ধ সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান থাকবে না তা কী করে হয়! এ ধারনা কষ্মিনকালেও ঠিক নয়। প্রচলিত গান-বাজনা ছাড়াও সংস্কৃতিচর্চা হতে পারে ৷ মনে রাখতে হবে, আল্লাহ প্রদত্ত সুর-ছন্দ ছাড়া অন্যগুলো মুসলিম মৌলিক জীবন ধারার নয় ৷ মুলত প্রতিটি ধর্মের স্বজাতীয় সংস্কৃতি বা কালচার রয়েছে যা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ৷ মুসলিম অন্য ধর্মালম্বীর সংস্কৃতি পালন বা তাদের আয়োজনে যোগ দেয়া হাদিসের ভাষ্যমতে সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে ।
সুতরাং এ উৎসবে বিকৃত সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই ৷ মুসলমানদের ঈদ আনন্দ কোনো সস্তা উৎসব নয় ৷ কারণ, এ ঈদ ইবাদতময় আনন্দ। জাহিলী যুগের আপত্তিকর উৎসব বন্ধ করে দিয়ে তোমরা এই দুদিন আল্লাহপ্রদত্ত পুতঃপবিত্র, নিষ্কলুষ, সুন্দর, মঙ্গলময় আনন্দ উৎসব পালন করতে আরম্ভ কর। (আবু দাউদ)
আজকাল দেখা যায় ঈদ-আনন্দ বলতে অনেক মুসলিম পরিবারই নতুন ডিজাইনের দামি পোশাক -আশাক পড়ে ঘুরে বেড়ানো, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ ইত্যাদিকে বুঝে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে এ সবই হলো ঈদ আনন্দ। ঈদ বিনোদন। যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখন আমাদের জীবন, আমাদের মরণ, আমাদের বিনোদন, আমাদের আনন্দ-বেদনা সব আল্লাহর জন্য নিবেদিত থাকতে হবে। আমাদের আনন্দ স্বেচ্ছাচারী আনন্দ হতে পারবে না। সত্যিই, ঈদ মুসলমানদের জন্য সংযম ও ত্যাগের আনন্দ। মুসলমান সব ক্ষেত্রেই আল্লাহর অনুগত থাকতে বাধ্য। তাই আমাদের উপলব্ধি ধরে রাখতে হবে, ঈদ কল্যাণমুখী আনন্দ। গরিবদের মাঝে ধন-সম্পদ বিলানোর আনন্দ। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশলবিনিময়ের আনন্দ। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলার আনন্দ। অন্যের সুখে সুখী এবং পরের দুঃখে দুঃখী হবার আনন্দ। যার তার সস্তা অনুকরণ পরিহার করতে হবে। তাহলেই আমাদের ঈদ উৎসব হবে আত্মার জাগরণ উৎসব।